ABOUT US

‘সর্ব ভারতীয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ’ একটি সার্বিক উন্নয়নমূলক সংগঠন। ২০২০ সালের ১৩ই ডিসেম্বর পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের সার্বিক উন্নতির জন্য এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পণ্ডিতগণের মতে, সিন্ধু সভ্যতার প্রায় সমসাময়িক পর্বে পূর্ব ভারতে ‘পুণ্ড্রদেশ’ এক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং এক উন্নত সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছিল। পুণ্ড্রদেশের রাজধানী ছিল মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড়ে প্রাকৃত ভাষায়, ব্রাহ্মীলিপিতে উৎকীর্ণ শিলালিপি পাওয়া গেছে যাতে ‘পুডনগল’ কথাটি আছে যার সংস্কৃত অর্থ পুণ্ড্রনগর। পৌণ্ড্র সভ্যতার বিকাশ প্রায় সমগ্র বঙ্গে বিস্তার লাভ করেছিল। পৌণ্ড্রবর্ধনের ইতিহাসই পূর্ব ভারতের ইতিহাসের প্রাচীনতম অধ্যায়।১

ভারতের জাতীয় মহাকাব্য মহাভারত, শ্রীমদ্ভগবদগীতা, হরিবংশ, মনু সংহিতা, মৎস্য পুরাণ, কুলতন্ত্র ইত্যাদি প্রাচীন গ্রন্থে পৌণ্ড্রদের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতে উল্লেখিত আছে, মহারাজ বলীর পুত্রগণ যথা- অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুহ্ম, পূর্ব ভারতের পাঁচটি স্থানের শাসক ছিলেন। মহাভারতের সভা পর্বে ১৩ অধ্যায়ে পৌণ্ড্র বাসুদেব সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি বঙ্গ, পুণ্ড্র ও কিরাত দেশের অধিপতি। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা ক্ষত্রিয় রাজা বাসুদেবের বংশধর।২ রাজা বাসুদেব কৌরব পক্ষের হয়ে মহাভারতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর পরবর্তী বংশধরেরা পুণ্ড্রবর্ধন নামে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।৩ পৌণ্ড্র রাজা বাসুদেবের ভাই কপিল যোগধর্ম অবলম্বন করে ‘মহামুনি কপিল’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। মহামুনি কপিল সাগর দ্বীপে বসবাস করতেন এবং এখানেই তিনি ‘সাংখ্য দর্শন’ রচনা করেছিলেন।৪ তাই পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের পূর্বপুরুষ হলেন ‘মহামুনি কপিল’। গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পর পুণ্ড্র দেশে এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্য। এই সময় পুণ্ড্র রাজ্য সারা বঙ্গদেশ জুড়ে বিরাজিত ছিল ও উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করেছিল।৫ ঐতেরেয় আরন্যকে পুণ্ড্র জনজাতিদের বিশ্বামিত্রের বংশধর বলা হয়েছে। বায়ু পুরাণ ও মৎস্য পুরাণে পুণ্ড্রজনদের ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে। মহাভারতের সভা পর্বেও পুণ্ড্রদের ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে।

অনেকে মনে করেন পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা সৎশূদ্র। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা প্রথমে ক্ষত্রিয় ছিল, পরে তারা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে এবং একাদশ শতকে তারা যখন হিন্দু ধর্মে ফিরে আসে তখন তাদের নাম হয় সৎশূদ্র। H. H. Risley তাঁর “People of India” গ্রন্থে বলেছেন, “পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা আচরণ ও অভ্যাসে প্রায় সৎশূদ্র এবং তারা তদের দৈনন্দিন ব্যবহারে কোন নীচতা দেখায়নি।৭ E. A Gait পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের বৌদ্ধ ধর্মবিশ্বাসের কথা বলেছেন।৮ ডঃ মনীন্দ্রনাথ জানার মতে, সেনদের রাজত্বকালে বর্ণ কৌলীন্য প্রকট আকার ধারণ করে এবং তারা ব্রাত্য ক্ষত্রিয়ে পরিণত হয়। এদের সংখ্যা গরিষ্ঠ ব্যক্তি গৌড়বঙ্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে সুন্দরবনের জঙ্গল কেটে বসবাস শুরু করে। তাই সুন্দরবনে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়ের সংখ্যা অনেক বেশী।৯ ধনঞ্জয় দাসের মতে, ‘একমাত্র বসিরহাট মহকুমার অধিবাসীগণ প্রাচীনকাল থেকে এই স্থানে বাস করিতেছে’(বাংলা ও বাঙ্গালীর ইতিহাস)।১০

১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের প্রথম জনগণনা প্রতিবেদনে প্রাচীন পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় জনগোষ্ঠীকে ‘Pod’ নামে উল্লেখ করা হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় জনসমাজের মধ্যে সামাজিক উত্তরণের জন্য এক আন্দোলন সূচিত হয়।১১ এই আন্দোলনকে ‘Self Respesct Movement’ বা ‘আত্ম মর্যাদা আন্দোলন’ বলা হয়।১২ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বেণীমাধব হালদার, শ্রীমন্ত নস্কর বিদ্যাভূষণ প্রমুখ। ১৯০১ সালের সেন্সাসে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের মধ্যে যারা চাষ করত তাদের পদ্মরাজ বা ব্রাত্যক্ষত্রিয় বলা হয়। পৌণ্ড্রদের সামাজিক মর্যাদার সরকার কর্তৃক অবনমন ঘটে। এই সময় পৌণ্ড্র ক্ষত্রিয়দের আত্ম মর্যাদা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের প্রথম গ্র্যাজুয়েট রাইচরণ সরদার। বেণী মাধব হালদার ও রাইচরণ সরদার ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে জনগণনার রিপোর্টে পৌণ্ড্রদের ক্ষত্রিয় হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন পত্র পাঠিয়েছিলেন কিন্তু আবেদন পত্রটি গৃহীত হয়নি।১৩

১৯২১ সালের সেন্সাসে পৌণ্ড্রদের নিম্নবর্ণের তালিকাভুক্ত করা হয়। এই সময় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতা রাইচরণ সরদার, মহেন্দ্রনাথ করণ প্রমুখ নিম্নবর্ণের তালিকা থেকে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের বাদ দিতে ও সামাজিক সম্মান বৃদ্ধির জন্য সেন্সাস সুপারিন্টেনডেন্ট W. H. Tomson-এর কাছে ডেপুটেশন সহকারে একটি স্মারক লিপি পেশ করে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় শব্দটি প্রয়োগের দাবী জানান। ১৪ “পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় কুল প্রদীপ” ও ‘A Short History and Ethnology of the Cultivating Pods’ নামে দুটি বইও সেন্সাস সুপারিন্টেনডেন্টকে দেওয়া হয় যাতে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের উচ্চ সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন।১৫ কিন্তু সরকারের ষড়যন্ত্রে এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনাতেও সরকারের একই অবস্থান বজায় থাকে। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের আগেই ‘ব্রাত্য ক্ষত্রিয় সমিতি’ ও ‘পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমিতি’ নামে পৌণ্ড্রদের দুটি সংগঠন গড়ে ওঠে। ইতিমধ্যে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতারা নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমকালীন সমস্যা তুলে ধরার জন্য ‘প্রতিজ্ঞা’(১৯১৮), ‘ক্ষত্রিয়’(১৯২০) ও ‘পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাচার’ (১৯২৪) নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন।১৬

এই সময় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের নেতারা নিজ সম্প্রদায়ের শিক্ষার প্রসারে জোর দেন। পিতামাতা যাতে তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করেন তাঁর আবেদন জানান। ১৯৩২ সালে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতারা একটি সম্মেলনের মাধ্যমে সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে,

  • ১. পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা পবিত্র পৈতা ধারণ করবে এবং দ্বাদশাশৌচ পালন করবে।

  • ২. সকল শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে এবং যদি প্রয়োজন হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় শুরু করতে হবে।

  • ৩. প্রত্যেক পরিবার পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় শিক্ষা তহবিলে দান করবেন।

  • ৪. সমাজ দর্পণ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করা হবে।

পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতা রাইচরণ সরদার প্রস্তাবিত তপশীলি তালিকা থেকে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে একটি মেমরেন্ডাম প্রদান করেন। তিনি সংরক্ষণের বিরোধিতা করেন এবং বলেন পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সম্প্রদায় বাংলার হিন্দু সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, সুতরাং সাহায্যের প্রয়োজন নেই।১৮ এ প্রসঙ্গে উলেখ্য যে, উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নিম্নবর্ণের যে তালিকা তৈরি করে তাতে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়ের উল্লেখ ছিল না।১৯ ১৮১০ সালে পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ, যে জাতির মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ, তাদের তালিকা তৈরি করেন, তাতে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা অন্তর্ভুক্ত হয়নি।২০ ১৯১১ সালের সেন্সাসে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের অন্যান্য বঞ্চিত জাতিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বলা হয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের ব্যবহার ও রীতিনীতি নিম্নবর্ণের মত নয়।২১ এমনকি এই সময়ের উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্যরা পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের নিম্নবর্ণের মনে করত না।২২ উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, এই সময় উচ্চবর্ণের সরকারি কর্মচারীদের কাছে সরকার নিম্নবর্ণের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য চাইলে সেখানে তারা পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের নাম দেননি।২৩ মিসেস অ্যানি বেসান্ত পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের দাবিকে সমর্থন করেন।

এখানে ইংরেজদের বিভেদের রাজনীতির কাছে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতাদের দাবি মান্যতা পায়নি। আসলে ইংরেজরা বর্ণ হিন্দুদের থেকে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের দূরে সরিয়ে বর্ণ হিন্দুদের দুর্বল করতে চেয়েছিল, যাতে ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন মজবুত হতে না পারে। কারন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতারা সবসময় মূল ধারার আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাদের পাশে থেকেছেন। এছাড়া ভৌগোলিক দিক থেকে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের অবস্থান ছিল কলিকাতার নিকটবর্তী। ফলে জাতীয় নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তারাই বেশি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন। তাই ইংরেজরা পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের জাতীয় আন্দোলন থেকে দূরে রাখার জন্য নিম্ন বর্ণের তালিকাভুক্ত করে।

অন্যদিকে নমশূদ্র নেতৃবৃন্দ তারা বরাবর স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে দূরে থেকেছেন, কারন তারা মনে করতেন ওটা বর্ণ হিন্দুদের আন্দোলন।২৪ পূর্ববঙ্গের সাহারাও একই কারণে স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান থেকে বিরত থাকেন।২৫ এমন কি মাহিষ্য সমাজও ইংরেজ রাজত্বকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলে মনে করতেন।

কিন্তু পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতারা ব্যতিক্রম ছিলেন। পৌণ্ড্র ক্ষত্রিয় নেতা মহেন্দ্রনাথ করণ পড়াশোনা উপেক্ষা করে স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন। এরফলে তিনি পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হন এবং তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষা ৯ বছর পরে প্রাইভেটে দিয়ে পাস করেন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কলম ধরে ‘বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা’ নামে বই ও অসংখ্য স্বদেশী কবিতা রচনা করেন এবং নানা সামাজিক উন্নয়ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।২৭ আর একজন পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতা রাজেন্দ্রনাথ সারকার ১৯২১-এর অসহযোগ আন্দোলনে ও ১৯৩০-এর আইন অমান্য আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় নেতা সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় স্বার্থে নির্বাচনে একজনকে সমর্থন করতে বললে তিনি তাকে সমর্থন করেন।২৮ আর একজন পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় স্বদেশী নেতা ছিলেন গৌরহরি বিশ্বাস। তিনি লবণ আইন আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। গৌরবাবুর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় জীবন মণ্ডল ও বীরুপদ মণ্ডল প্রমুখ পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় শিল্পী স্বদেশী গান গেয়ে সাধারন মানুষকে জাগিয়ে তোলেন।২৯ পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় মহিলা বিপ্লবী স্বর্ণময়ী মণ্ডল, মোক্ষদা নস্কর, অষ্টমী ঢালী প্রমুখ কারাবরণ করেন। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতা অনুকূল চন্দ্র দাস নস্কর স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান।৩০ কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের ভারত বিভাগের সিদ্ধান্তের তিনি তীব্র বিরোধিতা করেন। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় শিক্ষাদরদী ধ্রুবচাঁদ হালদার ও ভূষণ চন্দ্র নস্করও স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন।

পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় পতিরাম রায় স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর আস্থা অর্জন করেন।৩২ পতিরাম রায় ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে বসিরহাট লোক সভা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।

যাইহোক, শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের সিদ্ধান্তই বলবত থাকে। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নেতারা তাদের সামাজিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সার্বিক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন এবং অদ্যাবধি পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা তপশিলি তালিকাভুক্ত আছেন। ইংরেজদের শাসন ও বিভাজন নীতির স্বীকার হন পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা। নিজেদের সম্মান ও ভাগ্যের উপর অন্যদের খবরদারী শুরু হয়। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের আত্মমর্যাদা আন্দোলন আঘাতপ্রাপ্ত হয় ও স্তিমিত হয়ে পড়ে। আত্মশক্তির পরিবর্তে অন্যের বদান্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা, যা আজও চলছে।

জয় ভারত, জয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় ।।

সর্ব ভারতীয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ” সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান সমাজ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় পরিপ্রেক্ষিতে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান আবশ্যক হয়ে পড়েছে। আমাদের বর্তমান পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ আজ অভিভাবকহীন, অনাথ। এই সমাজের সমস্যা, অধিকার সম্পর্কে বলার কোনও সংগঠন নেই, নেতা তো দূরের কথা। ফলে আমাদের সমাজ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের নমশূদ্র সমাজ ও রাজবংশী সমাজ সংঘটিত হয়ে তারা সরকারের নিকট থেকে তাদের সম্প্রদায়ের গুণী মহাপুরুষদের নামে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছে। অথচ আমরা আমাদের সমাজের মহাপুরুষদের নামে কোনও প্রতিষ্ঠানের দাবী পর্যন্ত করতে অসমর্থ। কারণ আমরা সংগঠিত নই। শুধু তাই নয়, আমাদের সমাজ এতটাই ইতিহাস বিমুখ যে, নিজ সম্প্রদায়ের মহান ব্যক্তিদের নামের সাথে পরিচিত পর্যন্ত নয়। তাই আমরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি, যারা সংঘটিত তারা সমস্ত রকমের সুবিধা আদায় করছে। আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন ছাড়া আর কিছু করছি না। আমাদের সমাজের যুবরা উপযুক্ত পরামর্শ ও সাহায্যের অভাবে হয় তারা অন্য রাজ্যে কর্ম প্রচেষ্টায় রত অথবা বিপথগামী। তাদের দিশা দেখানোর জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজন। যুবদের উপযুক্তভাবে নির্মাণ এবং নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং পৌণ্ড্র সমাজের ক্ষত্রিয়ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজন। যেখানে আমাদের সমস্যার কথা আমরা মন খুলে আলোচনা করতে পারি, প্রয়োজনীয় সমাধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। আমাদের সমাজের ইতিহাস ও মনীষীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি এমন একটি সংগঠন প্রয়োজন। যারা ইতিহাস ভুলে যায়, তারা একই ইতিহাসের সম্মুখীন হয়। তাই আমাদের অতীত ইতিহাস বা পূর্বকৃত ভুল বা ভালো কাজ সম্পর্কে আমাদের সমাজকে ওয়াকিবহাল করানোর জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজন। সুযোগের অভাবে অনেক প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায়। একটি সংগঠনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজের উঠতি প্রতিভাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করতে পারি। আজকের সমাজ অনেকটা সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত, তাদের দিশা দেখাতে হলে তাদেরকে সংগঠনে সামিল করা দরকার। এর জন্য সংগঠনের প্রয়োজন। সমাজের নেগেটিভ চিন্তাধারাকে সঠিক পদ্ধতিতে পজিটিভ করতে হলেও একটি সংগঠন দরকার। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ সংগঠিত হলে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ শক্তিশালী হবে, আর শক্তিশালী সমাজ রাষ্ট্র গঠনে দক্ষ ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমান পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের অধিকাংশ মানুষ, রাষ্ট্র সম্পর্কে আশাহীন, দেশপ্রেম হীন, কর্মে উদ্যমহীন, ব্যক্তি জীবনে হতাশা-নিরাশাগ্রস্ত এবং নিজ সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য অপরের বদান্যের মুখাপেক্ষী। অথচ একসময় আত্মমর্যাদা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের আত্মজাগরণ ঘটে। আজ অনেক পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সেই মর্যাদাবোধ হারিয়ে ফেলেছে। এই সমাজ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী উপহার দিয়েছে, অথচ বর্তমান প্রজন্ম তাদের নাম পর্যন্ত জানেনা। দোষ তাদের নয়, দোষ সমাজের অগ্রবর্তী মানুষের। তারা সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি, তারা সংগঠিত হয়নি। তাই আমরা যদি এখনও সংগঠিত না হই আমাদের সমাজকে পিছিয়ে দেওয়া বা রাখার জন্য আমরাই দায়ী হব। তাই পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের সকলের একটি সংগঠন নির্মাণ করা উচিৎ ও তাতে সকলকে সামিল করা উচিৎ। উপযুক্ত সংগঠনের অভাবে আমাদের সমাজের জনপ্রতিনিধিরা উপযুক্ত ভূমিকা পালনে অনেক সময় ব্যর্থ হয়। কারণ তাদের পেছনে তার সমাজের যে সমর্থন দরকার তা তাদের থাকেনা। ফলে তারা অন্য সমাজের মানুষদের অঙ্গুলি হেলনে চলেন। এর জন্যও একটি সংগঠন দরকার। এই সমাজের মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারে, একে অপরকে পরামর্শ, বুদ্ধি ও অর্থ সাহায্য করতে পারে তেমন কোনও সংগঠন এই সমাজের নেই। তাই সংগঠন দরকার। কোনও গুণী মানুষকে যদি সেই সম্প্রদায়ের মানুষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে তাহলে অন্যরাও সম্মান প্রদর্শন করে না। তাই একটি সংগঠন প্রয়োজন যেখানে পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের গুণী মানুষদের সংবর্ধনা দেওয়া যায়, শ্রদ্ধা জানানো যায় এবং তারা পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজকে তাদের পরামর্শের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পান। এই সমাজের আর্থিক দিক দিয়ে অনগ্রসর মানুষদের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করার জন্যও একটি সংগঠন প্রয়োজন। সর্বোপরি, পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মঙ্গল চিন্তা এবং সার্বিক বিকাশের জন্য এই সমাজের মানুষদের জন্য, এই সমাজের মানুষদের নিয়ে একটি সংগঠন থাকা উচিত। তাই সর্ব ভারতীয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পৃথিবীর প্রথম দার্শনিক মহর্ষি কপিল মুনি পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষ ছিলেন। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়রা একসময় রাজার জাতি ছিল। তাই সকল পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় মানুষের কর্তব্য হল পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও সার্বিক বিকাশের জন্য এই সংগঠনে যোগদান করা এবং নিজ সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। ভারতে প্রায় ৩০০০ হাজার জাতি আছে। ধর্ম, কর্ম এবং অবস্থান ভেদে এদের উৎপত্তি (একটি গ্রামে যেমন একাধিক পাড়া থাকে কতকটা তেমনভাবে ভারত এই জাতিতে বিভক্ত যা ভারতকে অনন্য বৈচিত্র্য প্রদান করেছে, চিন্তা ও সংস্কৃতিকে করেছে সর্বজনীন)। ভারতের প্রত্যেকটা জাতি ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতির এক একটি স্তম্ভস্বরূপ। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতির অনেক স্তম্ভের মধ্যে একটি অন্যতম স্তম্ভ। ‘সর্ব ভারতীয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ’ তার সাধ্যানুসারে একটি স্তম্ভের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমাদের দেশ, ভারতমাতাকে মজবুত করতে বদ্ধপরিকর। তাই সকল পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব নির্বিশেষে কোনও দ্বিধা, সংকোচ না রেখে এই সংগঠনে যুক্ত হবেন, সংগঠনের কর্মকর্তারা এই কামনা করে।

জয় ভারত, জয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় ।।

সর্ব ভারতীয় পৌণ্ড্র ক্ষত্রিয় সমাজের সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

  • ১। ভারতের পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষদের মধ্যে ক্ষত্রিয় চেতনা বৃদ্ধি ও তাদেরকে একই সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিয়ে আসা।

  • ২। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষের মধ্যে ইতিহাসবোধ ও একাত্মতাবোধ জাগ্রত করা ও সহযোগিতার বাতাবরণ তৈরি করা।

  • ৩। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষের মধ্যে আত্মমর্যাদা আন্দোলনের মাধ্যমে আত্মসম্মান বোধ বৃদ্ধি করা।

  • ৪। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষের মধ্যে “Payback to your Society”-এর ধারণা জাগ্রত করা।

  • ৫। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষের মধ্যে ধর্ম ও সংস্কৃতি চেতনা বৃদ্ধির জন্য মেলার আয়োজন করা।

  • ৬। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষের মধ্যে সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ আরও বৃদ্ধি করা।

  • ৭। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নের ধারণা জাগ্রত ও বর্ধিত করা।

  • ৮। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষের মধ্যে আধুনিক সমাজ সংস্কার সম্পর্কে সচেতন করা। জাতপাত ও ধর্মের ব্যবধান মুছে ফেলা।

  • ৯। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের যুবদের নিয়ে ‘পৌণ্ড্র সেনা’ গঠন এবং নারীদের নিয়ে একটি ‘দেবী বাহিনী’ গঠন করা।

  • ১০। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষকে নানাবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ও আলোচনা সভাতে সামিল করা।

  • ১১। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মানুষকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন ও সম্মাননা প্রদর্শন।

  • ১২। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং বিভিন্ন দাবিদাওয়া যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নজরে এনে সাধ্যমত সমাধান বা প্রতিকারের ব্যবস্থা করা।

জয় ভারত, জয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় ।।

সংগঠন মন্ত্র (বেদ থেকে গৃহীত) ওঁ সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সংবোমনাংসি জানতাম্। দেবা ভাগং যথাপূর্ব্বে সং জানানা উপাসতে।। সমানো মন্ত্র সমিতিঃ সমানী সমানং মনঃ সহচিত্তমেষাম্। সমানং মন্ত্রমভি মন্ত্ৰয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি ।। সমানী বা আকুতিঃ সমানা হৃদয়ানি বঃ । সমানমস্তু বো মনো যথা বঃ সুসহাসতি। ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি ।। ( সামবেদ )

“সমভাবে চল, সমভাবে বল, সমভাবে মনোবৃত্তি সমূহের প্রেরণা হউক, পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব ঋষিগণের ন্যায় সমভাবে আরাধনা পরায়ণ হও। তোমাদের সমান মন্ত্র হউক, সমান সমিতি হউক, সমান মন হউক, সমান চিত্ত হউক, তোমরা সমান মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হও, সমানভাবে আত্ম নিবেদন কর, সম হৃদয়ে উদ্দেশ্য জানাও, তোমাদিগের মন সমানভাবে ভাবান্বিত হউক, তোমাদিগের হাস্যহর্ষ সমভাবাপন্ন হউক। ওম শান্তি! ওম শান্তি! ওম শান্তি”।।

জয় ভারত, জয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় ।।

পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় আত্মজাগরণ মন্ত্র

“বন্ধুগণ, ভ্রাতৃগণ, মাতৃগণ। তোমারা যে, যে অবস্থায় থাক না কেন ভুলিও না, তুমি এই পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজ জননীর একটি সন্তান। ভুলিও না, জননীর প্রতি তোমার কর্তব্য আছে। ভুলিও না তোমার চরিত্র, তোমার বৈশিষ্ট্য, তোমার কৃতিত্ব, তোমার গৌরব তোমার প্রতিষ্ঠার দিকে তোমার জননীর অপমান, তোমার জননীর লাঞ্ছনা, তোমার জননীর নির্যাতনের জন্য তুমি দায়ী। ভুলিও না- তোমার ব্যক্তিগত সুখ, স্বচ্ছন্দ, সুবিধা, বিলাস, ব্যাসন ভোগের ক্ষুধা মনুষ্যেতর জীবনেও মিটিতে পারে। ভুলিও না তুমি ক্ষত্রিয়, যুদ্ধই তোমার নিত্য সহচর। ভুলিও না— তুমি আর্য, আচার্য্যত্ব তোমার আছে। ভুলিও না তুমি ভারতের একজন, পৃথিবীর একজন। ভারত তথা পৃথিবী তোমার মুখপানে চাহিয়া আছেন। স্মরণ রাখিও–তোমার ইতিহাস তোমাকেই গবেষণা করিতে হইবে। স্মরণ রাখিও পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃত, হিন্দী, উর্দু, আরবী, পার্শী, তামিল, তেলেগু, উড়িয়া, গুজরাটী, কানাড়ী, আসামী, চীনা ভাষার মধ্যে তোমাকে প্রবেশ করিতে হইবে, তোমার প্রাচীন কথা তোমাকেই উদ্ধার করিতে হইবে। মৎসর হস্তের বিকৃত বিবৃতিকে তোমার লেখনীর নির্মম আঘাতে খণ্ডন করিতে হইবে। সত্যের প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। স্মরণ রাখিও, যুদ্ধ চলিয়াছিল, চলিতেছে ও চলিবে, অনন্ত কাল চলিবে। স্মরণ রাখিও — শক্তিহীনের বৈশিষ্ট্য নাই, মর্যাদা নাই, সত্তাও থাকিতে পারে না। ভাবিয়া দেখিও, অর্থের অভাব নয়, ভাবের অভাবই অভাব। চিন্তা করিও—পরিবেশই মানব গঠন করে। অসৎ পরিবেশ নিষ্ঠুর ভাবে বর্জন ও সৎপরিবেশে প্রবেশই অস্তিত্ব রক্ষার উপায়। মনে রাখিও তোমার পরিচয়ে, তোমার জাতি, তোমার জননীর পরিচয়। স্থির জানিও তোমার আদরেই তোমার জননীর আদর। বিচার করিও -- তোমার গুরু পুরোহিত কুলের অবনতি প্রার্থনায় ভগবান বিচলিত হইতে পারেন কিন্তু মৎসর মানবকুল তাহার স্পর্শে কঠিন হইতে কঠিনতর হয়। মনে রাখিও একতাই বল, সংঘশক্তিই বল। মনে রাখিও – কুটনীতিই তোমার মেরুদন্ড ভাঙ্গিয়া দিয়াছে। তোমাকে সাবধান হইতে হইবে, আবার সোজা হইয়া সোজা পথে চলিতে হইবে। লুপ্ত গরিমাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে, উজ্জ্বলতর করিতে হইবে। নচেৎ তোমার আত্মাই তোমাকে ক্ষমা করিবে না, করিতে পারে না। সাধু। সাবধান! প্রলোভনে বঞ্চিত হইও না, আত্ম-বিক্রয় করিও না। নিজে সুপ্রতিষ্ঠিত হও। “কুলং পবিত্রং জননী কৃতার্থ।” বাক্য সার্থক কর। ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি !!!”

- মহাত্মা রাইচরণ সরদার, “দীনের আত্মকাহিনী বা সত্য পরীক্ষা” থেকে সংগৃহীত।